
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শতাধিক ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার পরিবর্তে পুড়ছে প্রায় দৈনিক ২শ’ টন কাঠ। এতে দিন দিন ন্যাড়া হচ্ছে সংরক্ষিত বনভূমি ও পাহাড়। আর এসব কাঠ বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করছে কাঠ ব্যবসায়ীচক্র।
সংরক্ষিত বন ও বনভূমি দেখভাল এবং রক্ষায় বন বিভাগ থাকলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে রাঙ্গুনিয়ার বনাঞ্চল দিন দিন বৃক্ষশূন্য হওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গড়ে উঠছে অবৈধ বসতি।
চলতি শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়ে শুরু হয়েছে বনাঞ্চলের চারা গাছ নিধনের মহোৎসব। ড্রাম্পার জিপ ও ট্রাকে করে এসব চারা গাছ কেটে লকড়ি হিসেবে পাচার করছে একটি সিন্ডিকেট। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনদুপুরে এসব বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব চললেও রহস্যজনক কারণে বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে। ফলে দিনের পর দিন ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়। শুধু তাই নয়, কোথাও কোথাও বনদস্যু ও ভূমিদস্যুদের থাবায় ন্যাড়া পাহাড়ও রক্ষা পাচ্ছে না। সেখানে অবৈধ বসতি স্থাপনের পাশাপাশি পাহাড় কেটে বিক্রি করা হচ্ছে মাটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে দিনে রাতে প্রতিদিন বনের গাছ কেটে প্রায় দুই শত টন কাঠ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় পাচার করা হচ্ছে। চন্দ্রঘোনা রাইখালী ফেরি দিয়ে রাজস্থলী ও কাপ্তাই পাল্পউড বাগানের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের খুরুশিয়া দশমাইল এলাকা থেকেও চন্দ্রঘোনা হয়ে হোসনাবাদ নিশ্চিন্তাপুরের ৭টিসহ, রাঙ্গুনিয়া ও ইছামতী রেঞ্জের আওতাধীন বন থেকে ইসলামপুর, রাজানগর, দক্ষিণ রাজানগর, কোদালা, পদুয়া, সরফভাটার চিরিঙা ও পোমরার শতাধিক ইটভাটায় কাঠ পাচার হয়।
রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর, রাজানগর, ঠাণ্ডাছড়ি, হোসনাবাদ, কোদালা, পোমরা, বেতাগী, সরফভাটা ও বাঙ্গালহালিয়া এলাকার অন্তত শতাধিক ভাটায় কয়লার পরিবর্তে এ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এক শ্রেণীর বন কর্মকর্তার যোগসাজশে রাঙ্গুনিয়া বিভিন্ন সড়ক ও নদীপথে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চলের গাছ ইটভাটায় চলে যাচ্ছে। প্রতি চাঁদের গাড়ি বা ট্রাকের চাঁদার টোকেন বন কর্তাদের কাছে জমা হওয়ার পর গাড়িগুলো ফ্রি চলাচলের অনুমতি পেয়ে যায়। রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ, ইছামতী রেঞ্জ, ইসলামপুর, বগাবিলী, কোদলা, খুরুশিয়া, চিরিঙ্গা, পোমরা বনবিট ও কর্ণফুলী নদীর পাশে বনজ শুল্ক ফাঁড়ি থাকলেও টোকেন দেখানোর পর কর্তারা নীরব দর্শক হয়ে যায়। অথচ বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কঠোর হলপ কখনো এভাবে প্রকাশ্যে কাঠ পাচার ও পোড়ানো সম্ভব হতো না। বন বিভাগ ও প্রশাসনের যোগসাজশ থাকার ফলে রাঙ্গুনিয়ার সবুজ পাহাড়গুলো দিনে দিনে ন্যাড়া পাহাড়ে রূপ পাচ্ছে। শুধু পাহাড়ের কাঠ পোড়ানের সুবিধার জন্য রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ও সংরক্ষিত বনের পাশে গড়ে উঠেছে ৬০-৬৫টি অবৈধ ইটভাটা। আবার এসব ইটভাটায় মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযানও চালানো হলেও কোন ধরনের প্রভাব নেই। ইটভাটাগুলো চলছে খেয়াল খুশিমত। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে কাঠ পাচার ও পোড়ানো চলতে থাকলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বনাঞ্চল অচিরেই বৃক্ষশূন্য হয়ে যাবে এবং এতে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।
এ ব্যাপারে জানতে রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুক করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি জরুরি কাজ থাকার কারণ দেখিয়ে এই ব্যাপারে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ইছামতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমি ইছামতী রেঞ্জে যোগ দিয়েছি অল্প কিছুদিন হচ্ছে। এসেই কাঠ পাচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানী বলেন, ‘কোনও ইটের ভাটায় পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ করলে ছাড় দেওয়া হবে না। যদি কোনও ভাটায় বনের কাঠ, ফসলি জমির উর্বর মাটি ও পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করা হয়, সে সব ইটভাটা বন্ধ করে মালিকদের বিরূদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সাম্প্রতিক বাংলা -ডট
এম মতিন, ব্যুরো চীফ (চট্টগ্রাম) 









