
শহিদ জয়, যশোর
যশোরের নাভারণ সরকারি খাদ্য গুদামের চাল লোপাট ও নিম্নমানের খাদ্যশস্য মজুদের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সূত্র জানায়, নাভারণ খাদ্য গুদামে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। জানা গেছে, গুদামের বিভিন্ন খামালের মাঝখানে পুরনো লালচে চাল মজুদ রাখা হয়েছে,আর চারপাশে ভালো মানের চাল সাজানো হয়েছে। ৬ নম্বর খামালে নিম্নমানের চালের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে মোহিনীসহ কয়েকটি অটো রাইস মিল থেকে সরবরাহকৃত চালগুলো নরম ও নিম্নমানের।
অভিযোগ উঠেছে, লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে এসব চাল গুদামে গ্রহণ করেছেন ওসিএলএসডি (অফিসার ইন চার্জ এলএসডি) জামশেদ ইকবালুর রহমান।
এছাড়া, দুর্গাপূজার ডিওর (ডেলিভারি অর্ডার) মাল ক্রয়ের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করেছেন তিনি। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, দুর্গাপূজার কোনো চাল গুদাম থেকে বের হয়নি। এখনও প্রায় ৩৫ মেট্রিক টন চাল বাইরে থেকে এনে গুদামে ঢোকানোর চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
গুদামে প্রায় ১৫ শতাধিক বস্তা ঘাটতি থাকার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ছেঁড়া ও ব্যবহার অনুপযোগী বস্তা মজুদের অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে ওইসব বস্তা সরকারি চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন গুদাম রক্ষক জামশেদ ইকবাল।
সূত্র আরও জানায়, বিগত কয়েক মৌসুমে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করেন জামশেদ ইকবাল। কৃষকের তালিকায় যাদের নাম দেখানো হয়, তারা কেউই ধান বিক্রি করেননি। সিন্ডিকেট সদস্যরা বাইরের জেলা থেকে ধান ও চাল এনে জমা দিয়েছেন। কাগজে ধান ক্রয় দেখিয়ে ওসিএলএসডি লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে জামশেদ ইকবাল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ খাদ্য গুদামে বদলির আশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৫ লাখ টাকার অফার দিয়েছেন।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে শার্শা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সালমা চৌধুরীকে। অপর দুই সদস্য হলেন জেলা কার্যালয়ের কারিগরি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মুক্তাদির রহমান ও কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক মিয়ারাজ হোসেন। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শুধুমাত্র খাদ্য অধিদপ্তরের দায়সারা তদন্ত নয়, বরং জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে শক্তিশালী কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।
এই বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।