সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি: ফরহাদ মজহার

  • যশোর প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ০৭:৩৮:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • ৪৭ বার পড়া হয়েছে

যশোর প্রতিনিধি

বিএনপির ‘দ্রুত নির্বাচন’ দাবির সমালোচনা করে বিশিষ্ট দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, দলটির অনেক নেতা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। তারা নিশ্চিতভাবে বঙ্গোপসাগরে ডুববে। তবে খালেদা জিয়ার আপসহীন মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, তার অবস্থান অভ্যুত্থানকারীদের শক্তি জুগিয়েছে, তাই বিজয়ের পরপরই তাকে মুক্ত করা হয়েছে।

ফরহাদ মজহার আজ শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে এই মত প্রকাশ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা শাখা ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে তরুণদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভাটি আয়োজন করে।

সভায় ফরহাদ মজহার বলেন, চব্বিশে ছাত্র-জনতা-সৈনিকদের গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু ‘ফ্যাসিবাদী সংবিধানথ বহাল থাকায় প্রতিবিপ্লবও হয়ে গেছে। এই সংবিধান না থাকলেও ফরমান দিয়ে দেশ চালানো যায়। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা একের পর এক ভুল করে চলেছে। তাদের প্রথম ভুল,চুপ্পুর কাছে শপথ নেওয়া। এখন তারা মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল করতে চাইছে, এটি আরেকটি ভুল।

তিনি বলেন, মধ্যপন্থা হলো সুবিধাবাদ। তরুণদের রাজনৈতিক দল হতে হবে সব ধরনের ফ্যাসিবাদবিরোধী। এটি শুধু বাঙালি জাতিবাদের বিরোধিতা করবে না, ধমর্ীয় ফ্যাসিবাদসহ সব ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করবে। সব ধরনের পরিচয়বাদী রাজনীতিই হলো ফ্যাসিবাদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দল গড়তে এতো মানুষ রক্ত দেয়নি।

ভারত ক্রমাগত উসকানি দিচ্ছে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, আগামীতে অনেক খারাপ পরিস্থিতি আসছে। নিজেদের মধ্যে হানাহানি, মাঠ দখলের লড়াই বন্ধ না করলে পরাজিত ফ্যাসিবাদীরা দিল্লির সহায়তায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যে আছিয়া ধর্ষণ ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরাজিত ফ্যাসিবাদের দোসররা ইউনূস সরকারকে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এসব প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার নারীর অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন,আজ সেই মেয়েরা কোথায়? কেন তাদের আমরা নিরাপত্তা দিতে পারছি না? কেন তাদের রাজনীতির ময়দানে সামনের কাতারে আসার সুযোগ করে দিতে পারছি না? মুহম্মদের (স.) সময় কি নারীরা মসজিদে যায়নি, যুদ্ধ করেনি? তাহলে কেন আজ তাদের আমরা ঘরে বন্দি রাখার চেষ্টায় অবতীর্ণ হই?

‘বিদ্যমান সংবিধান বাংলাদেশের নয়থ মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, সত্তরের নির্বাচন হয়েছিল পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য। কিন্তু নির্বাচিতরা দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করে। এই ম্যান্ডেট তাদের ছিল না। সেই কারণেই তারা সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের স্থলে ভিন্ন চারটি মূলমন্ত্র হাজির করেছিল। এটি জনগণের অভিপ্রায়ের বিপরীত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও আলোচনা করেন লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান,এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ রোমেল প্রমুখ।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ফরহাদ মজহার যশোরে আসেন। ওই দিন দুই দফায় তিনি জ্ঞান চর্চাকেন্দ্র ‘প্রাচ্যসংঘের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মতবিনিময়কালে তিনি ফকিরদের আস্তানায় ক্রমাগত হামলার নিন্দা করেন। বলেন,এর ফলে ভারত সুযোগ নেবে। তারা বিশ্বব্যাপী প্রচার করবে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। এর ফলে দেশকে আবার ওয়ার অন টেররের বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হতে পারে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

যশোরের শার্শায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় দোয়া-মাহফিল

বিএনপি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি: ফরহাদ মজহার

প্রকাশের সময় : ০৭:৩৮:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

যশোর প্রতিনিধি

বিএনপির ‘দ্রুত নির্বাচন’ দাবির সমালোচনা করে বিশিষ্ট দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, দলটির অনেক নেতা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। তারা নিশ্চিতভাবে বঙ্গোপসাগরে ডুববে। তবে খালেদা জিয়ার আপসহীন মনোভাবের প্রশংসা করে বলেন, তার অবস্থান অভ্যুত্থানকারীদের শক্তি জুগিয়েছে, তাই বিজয়ের পরপরই তাকে মুক্ত করা হয়েছে।

ফরহাদ মজহার আজ শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে এই মত প্রকাশ করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা শাখা ‘জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে তরুণদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভাটি আয়োজন করে।

সভায় ফরহাদ মজহার বলেন, চব্বিশে ছাত্র-জনতা-সৈনিকদের গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু ‘ফ্যাসিবাদী সংবিধানথ বহাল থাকায় প্রতিবিপ্লবও হয়ে গেছে। এই সংবিধান না থাকলেও ফরমান দিয়ে দেশ চালানো যায়। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা একের পর এক ভুল করে চলেছে। তাদের প্রথম ভুল,চুপ্পুর কাছে শপথ নেওয়া। এখন তারা মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল করতে চাইছে, এটি আরেকটি ভুল।

তিনি বলেন, মধ্যপন্থা হলো সুবিধাবাদ। তরুণদের রাজনৈতিক দল হতে হবে সব ধরনের ফ্যাসিবাদবিরোধী। এটি শুধু বাঙালি জাতিবাদের বিরোধিতা করবে না, ধমর্ীয় ফ্যাসিবাদসহ সব ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করবে। সব ধরনের পরিচয়বাদী রাজনীতিই হলো ফ্যাসিবাদ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দল গড়তে এতো মানুষ রক্ত দেয়নি।

ভারত ক্রমাগত উসকানি দিচ্ছে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, আগামীতে অনেক খারাপ পরিস্থিতি আসছে। নিজেদের মধ্যে হানাহানি, মাঠ দখলের লড়াই বন্ধ না করলে পরাজিত ফ্যাসিবাদীরা দিল্লির সহায়তায় ফিরে আসার সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যে আছিয়া ধর্ষণ ও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরাজিত ফ্যাসিবাদের দোসররা ইউনূস সরকারকে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এসব প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজার হাজার নারীর অংশগ্রহণের প্রশংসা করে বলেন,আজ সেই মেয়েরা কোথায়? কেন তাদের আমরা নিরাপত্তা দিতে পারছি না? কেন তাদের রাজনীতির ময়দানে সামনের কাতারে আসার সুযোগ করে দিতে পারছি না? মুহম্মদের (স.) সময় কি নারীরা মসজিদে যায়নি, যুদ্ধ করেনি? তাহলে কেন আজ তাদের আমরা ঘরে বন্দি রাখার চেষ্টায় অবতীর্ণ হই?

‘বিদ্যমান সংবিধান বাংলাদেশের নয়থ মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, সত্তরের নির্বাচন হয়েছিল পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য। কিন্তু নির্বাচিতরা দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করে। এই ম্যান্ডেট তাদের ছিল না। সেই কারণেই তারা সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের স্থলে ভিন্ন চারটি মূলমন্ত্র হাজির করেছিল। এটি জনগণের অভিপ্রায়ের বিপরীত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও আলোচনা করেন লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট বেনজীন খান,এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য খালেদ সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ রোমেল প্রমুখ।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে ফরহাদ মজহার যশোরে আসেন। ওই দিন দুই দফায় তিনি জ্ঞান চর্চাকেন্দ্র ‘প্রাচ্যসংঘের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মতবিনিময়কালে তিনি ফকিরদের আস্তানায় ক্রমাগত হামলার নিন্দা করেন। বলেন,এর ফলে ভারত সুযোগ নেবে। তারা বিশ্বব্যাপী প্রচার করবে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। এর ফলে দেশকে আবার ওয়ার অন টেররের বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হতে পারে।