
নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুছিহালা গ্রামের কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস। তিনি সারাবছরই তার জমিতে নানান ধরনের সবজি চাষাবাদ করে থাকেন। তবে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তিনি স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে রঙিন ফুলকপি ও ডাব বেগুন চাষ করে বাম্পার ফলন ফলিয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন।
এদিকে সাহতা ইউনিয়নের শালনগর গ্রামের জামাল মিয়া তার অল্প(২০ শতক) জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধু জৈব সার প্রয়োগ করে চার রঙের ফুলকপি ও ডাব বেগুন চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন। তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরাও।
আর রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে কৃষক জামাল মিয়ার ক্ষেতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন স্থানীয় কৃষকসহ উৎসুক জনতা। কেউ নিচ্ছেন পরামর্শ আবার কেউ তুলছেন ছবি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গুছিহালা গ্রামের কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস,শালনগর গ্রামের কৃষক জামাল মিয়া(২০ শতক),শালনগর গ্রামের কৃষক আল আমিন(২০ শতক), মনাষ গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন (৪০ শতক), সিংধা গ্রামের কৃষক ওহাব মিয়া তার (১০ শতক) জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শে তারা তাদের নিজস্ব জমিতে কয়েক রঙের ফুলকপি বাঁধাকপি ও টমেটো এবং ডাব বেগুনের বীজ বপন করে তারা বর্তমানে স্বাবলম্বী। এতে তারা কোন প্রকার রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধু জৈবসার ব্যবহার করছেন। এতে চারাসহ সব মিলে তার খরচ হয়েছে খুবই কম টাকা। চারা রোপনের ৭০ থেকে ৭৫ দিন পর ক্ষেতে এখন এসেছে রঙ্গিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো এবং ডাব বেগুন, এসব সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তারা সহ অনেকেই।
কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস জানান, তিনি তার ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো এবং ডাব বেগুন বিক্রি শুরু করেছেন। তিনি আশা করছেন, পুষ্টিগুণে ভরপুর এই রঙ্গিন ফুলকপিগুলো, তিনি আশা করছেন এবছর ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবেন।

কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, মজার ব্যাপার হলো রঙিন এসব ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো এবং ডাব বেগুন দেখতে প্রতিদিনই এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ আমার জমিতে ভীড় করছেন। কেউ নিচ্ছেন চাষের পরামর্শ আবার কেউ কেউ তুলছেন ছবি। তাছাড়া বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যায় এসব রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো এবং ডাব বেগুন গুলো।
সাহতা ইউনিয়নের শালনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, আমাদের এলাকায় আল আমিনের আগে অন্য কেহ রঙিন ফুলকপির চাষ করে নাই। আমিও ফুলকপিগুলো এর আগে দেখেছি। তবে এখানে খুব ভালো ফলন হয়েছে। এসব কপি আবাদে খরচ কম এবং বাজারে চাহিদা ও দাম বেশি। আগামীতে আমরাও আমাদের জমিতে রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো এবং ডাব বেগুনের চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান বলেন, কৃষক সন্তোষ বিশ্বাস,আল আমিন, মোশারফ হোসেন, জামাল মিয়া এই সব রঙিন ফুলকপি বাঁধাকপি টমেটো এবং ডাব বেগুন চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের দেখে অনেকেই শাকসবজি চাষে খুবই আগ্রহী প্রকাশ করেছেন। তারা সবাই রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো এবং ডাব বেগুন চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন। তাদের দেখাদেখি স্থানীয় অনেক কৃষকই এখন রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো এবং ডাব বেগুন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি সবজি। বিশেষ করে ফুলকপিতে ভিটামিন সি, ই, কে, ফলিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে। এটি ক্যানসার প্রতিরোধেও কাজ করে। আমরা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরোও বলেন, সাধারণ কপির চেয়ে রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি ও টমেটো এবং ডাব বেগুনের চাহিদা বাজারে অনেক বেশি। উৎপাদন খরচও তুলনামূলক খুব একটা বেশি না। কৃষকদের সকল পরামর্শ দিতে উপজেলা কৃষি বিভাগ সব সময় তাদের পাশে আছে।
সাম্প্রতিক /বাংলা /ডট